মকবুল হোসেন: নরসিংদীতে মো: মানসুর মিয়া ও অহিদুল্লাহ নামে আপন দুই ভাইকে দফায় দফায় লাঞ্ছিত ও মারধর করে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মহিষাশুড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুফতি কাউছার আহমেদ ও ইউপি সদস্য সমির হাসানের বিরুদ্ধে।
এঘটনায় গতকাল রবিবার (২ জুন) ভুক্তভোগী মোঃ মানসুর মিয়া বাদি হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মুফতি কাউছার সহ ১০ জনের বিরেুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগীর নিয়োজিত আইনজীবী ফয়সাল সরকার।
এর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিয়েও কোন বিচার না পাওয়ায় আদালতের দ্বারস্থ হন বলে জানান মামলার বাদী মোঃ মানসুর মিয়া।
এদিকে নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা সুলতানা নাসরিন এর সাথে কথা হলে তিনি মহিষাশুড়ার ইউপি চেয়ারম্যান মুফতি কাউছার আহমেদ এর বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগের বিষয়ে অবগত নন বলে জানান। তবে বিষয়টি তদন্ত সাপক্ষে জানানো হবে বলে জানান তিনি।
এলাকাবাসী, পুলিশ ও ভুক্তভোগীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মহিষাশুড়া ইউনিয়নের বালুসাইর গ্রামের মজিবুর রহমান এর ছেলে মো: মানসুর মিয়ার সাথে তার সৎ ভাইদের জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলেছে। এর জেরে বিভিন্ন সময় তাদের সৎ ভাইয়েরা তাদেরকে শারীরিক নির্যাতন ও লাঞ্ছিত করা সহ আর্থিক ক্ষতি করে আসছে।
এঘটনায় মহিষাশুড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুফতি কাউছার আহমেদ ও ইউপি সদস্য সমির হাসান তাদের সৎ ভাইদের পক্ষ নিয়ে সালিশের নাম করে ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে ডেকে নেয়। সেখানে নিয়ে বিচারের নামে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য মিলে মো: মানসুর মিয়াকে বেধড়ক মারধর করে। তাকে বাঁচাতে তার ছোট ভাই অহিদুল্লাহ এগিয়ে আসলে সেও মারধরের শিকার হয়। পরে জোরপূর্বক খালি কাগজে স্বাক্ষর রেখে মানসুরকে ছেড়ে দেয় তারা।
বিচার সালিশে আসা মহিষাশুড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য রিপন মিয়া বলেন, মানসুর মিয়াকে তার বাবা কিছু জমি দিয়ে দিছে। এই নিয়ে তার সৎ ভাইয়েরা চেয়ারম্যানকে দিয়ে পরিষদে ডাকায়। পরে মানসুর মিয়া পরিষদে আসলে চেয়ারম্যান একতরফা বিচারের মাধ্যমে জোর করে কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলে মানসুর মিয়াকে। এসময় সে স্বাক্ষর না দিলে ইউপি কার্যালয়ে মানসুর মিয়াকে মারধর করে স্বাক্ষর নেয়া হয়।
এবিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন।
এদিকে মানসুরের সৎ ভাই মাঈনুদ্দিন বলেন, মানসুরের দেয়া অভিযোগ সত্য নয়। ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে বিচার হইছে ঠিক আছে কিন্তু কোন মারধর করেনি তারা।
ভুক্তভোগী মানছুর মিয়া বলেন, আমি বাবাকে দীর্ঘদিন যাবৎ চিকিৎসা সহ দেখভাল করে আসছি, আমার সৎ ভাইয়েরা বাবাকে কোন সময় দেখাশুনা না করায় বাবা আমাদের পক্ষে কথা বলেন।এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদেরকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে জমি ভোগ করতে বিভিন্ন মানুষ দিয়ে আমাদের উপর নির্যাতন চালায়। আমরা চেয়ারম্যানের কাছ থেকে আমাদের উপর অত্যাচারের কোন বিচার পাইনি। তারা যেন আমাদেরকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে না পারে সেজন্য গত তিন বছর পূর্বে বাবা আমাদেরকে বাড়ি থেকে কিছু জমি হেবা করে দেয়। এখন আমার বাবা প্যারালাইজ হয়ে অচল হয়ে বিছানায় পরে আছে।
এই সুযোগে আমার সৎ ভাইয়েরা আমাদের উপর অত্যাচার জুলুম করছে। মানুষকে নিয়ে মারধর করা সহ প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে। এমনকি টাকার বিনিময়ে আমার সৎ ভাইদের পক্ষ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা মিলে আমাকে মারধর করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছে। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি। তাই নরসিংদীর বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছি।
কিন্তু মামলার পর থেকে তারা আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। বর্তমানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানান তিনি।